শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত
গোলাম মোস্তফা : ঘড়ির কাঁটায় তখন সময় দুপুর ১২ টা । কলেজ মাঠে বসেছে গরু-ছাগল আর কাঠের তৈরি আসবাবপত্রের হাট । কলেজে গিয়ে দেখা যায় ছাত্র শিক্ষক কেউই নেই । আছে শুধু অধ্যক্ষের রুমটি খোলা । গত বৃহস্পতিবারের এ চিত্র সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজের । এরকম অনিয়মের মধ্যেই চলছে বছরের পর বছর।
এসময় কথা হয় ঐ কলেজের পিয়ন রমা নাথের সাথে । তিনি বলেন, কলেজ মাঠে সাপ্তাহিক হাট বসায় কোন বৃহস্পতিবারেই শিক্ষকরা কলেজে আসেন না । এ কারণে ছাত্র-ছাত্রীরাও আসেনা । শুধু অফিস কক্ষটাই খোলা থাকে। নওগাঁ হাটটি সিরাজগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী হাটগুলোর মধ্যে অন্যতম । হাটটির অবস্থান সিরাজগঞ্জ,পাবনা ও নাটোর জেলার সীমানাবর্তী হওয়ায় সঙ্গত কারণেই ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিও একটু বেশি । গত ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ইং সালে তাড়াশ উপজেলা প্রশাসনের সাথে নওগাঁ হাট ইজারা কমিটির সম্পাদিত এক চুক্তিনামা থেকে জানা যায়, এক কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্বে এক বছরের জন্য হাটটি ইজারা দেয়া হয়েছে । চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইজারাদার হাট সীমানার বাইরে কোন প্রকার হাট লাগানো বা টোল আদায় করা যাবে না। এ ছাড়াও ইজারাদার নিজ খরচে হাট পরিষ্কার রাখবেন । কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র । ইজারাদাররা রীতিমতো হাটের সীমানার বাইরে কলেজ মাঠে হাট বসিয়ে টোল আদায় করছেন ।
এ প্রসঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষ খন্দকার আবু সাঈদ জানান, তিনি কলেজটির অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন । কলেজ মাঠে হাট লাগার কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘিœত হওয়ায় তারা বৃহস্পতিবার কলেজে আসে না । সে কারণে বেশিরভাগ শিক্ষকই অনুপস্থিত থাকেন । বিষয়টি তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এদিকে ইজারাদাররা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তারা কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না । নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ মাঠেই নির্মিত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর পলাশডাঙা যুব শিবিরের স্মৃতি স্তম্ভ এবং নির্মাণাধীন রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়ণে একটি মুক্তিয্দ্ধু জাদুঘর । এমন একটি পবিত্রতম স্থাপনার সামনে হাট বসায় জায়গাটি প্্রায় সময়ই থাকে অপরিচ্ছন্ন । আগ্রহী দর্শনার্থীরা এসে এমন চিত্র দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যান । তাড়াশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার গাজী আরশেদ আলী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, প্রশাসনের প্রতি দাবী অবিলম্বে কলেজ মাঠে হাট বসানো বন্ধ করা হোক ।
হাটের ইজারাদার মো: আলহাজ উদ্দিন কলেজ মাঠে হাট লাগানো বিষয়ে বলেন, অনেক আগে থেকেই কলেজ মাঠে হাট বসে আসছে । প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সেই মোতাবেক কলেজ মাঠে হাট বসানো হয় । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, হাটের কারণে তারা বৃহস্পতিবার কলেজে যায় না । শুধুমাত্র হাটের জন্য বছরে প্রায় ৫০ দিন ক্লাস বন্ধ থাকায় তাদের পড়ালেখার মান খারাপ হচ্ছে ।বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেন জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে কোনভাবেই হাট-বাজার বসতে পারে না । আমি শিগগিরি ব্যবস্থা নিবো । এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফফাত জাহান বলেন, হাট পেরিফেরির এলাকার বাইরে কোন হাট বাজার বসিয়ে টোল আদায় করা যাবে না । আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনার প্রশ্নই ওঠে না । দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।