চলনবিল বার্তা রির্পোট : চলনবিলের পানি নিস্কাশনের দীর্ঘতম নিমাইচড়া খাল পূণ: খননে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে খোদ এলাকাবাসীর তরফ থেকে। বিষয়টিতে এলাকার এমপিগনের দৃষ্টি দেয়া আশু প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, সিংড়া উপজেলার বিলদহর নিকটবর্তী গুড় নদী হতে উৎপত্তি হয়ে চলনবিলস্থ চাটমোহর উপজেলার মির্জাপুরে নিমাইচরা খাল নাম ধারণ করে এটা বাঘাবাড়ীতে বড়াল নদীতে মিলিত হয়েছে। তৎকালীন পাকিস্তান আমলে পঞ্চাশের দশকে প্রধানত: চলনবিলের পানি নিষ্কাশনের লক্ষ্যে ও শুকনো মওসুমে পানি ধরে রেখে চলনবিলের চাষাবাদে সেচের সুবিধার্থে কুন্দইল-বেসানি-নিমাইচড়া খাল খনন করা হয়েছিল। এই সুপস্রস্থ খাল নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর,সিরাজগঞ্জের তাড়াশ এবং পাবনার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ খালের সাথে আবার সংযোগ রয়েছে স্থানীয় বহু ছোট খাট খাল ও নালার। দীর্ঘ প্রায় আট দশকেও এই খাল সংস্কার না করায় তা ভরাট হয়ে পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ফলে বর্তমানে শুকনো মওসুমে খালটি সম্পূর্ণ পানি শুন্য হয়ে পড়ে। অপরদিকে গত কয়েক বছর যাবৎ সিংড়ার গুড় নদীতেও শুষ্ক মওসুমে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় উক্ত খালেও কোন পানি প্রবাহ থাকে না। এই পরিস্থিতিতে নিমাইচড়া খাল থেকে কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা পাওয়া বর্তমানে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকেরা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে গভীর ও অগভীর নলকুপের সেচের উপড়। এর ফলে চলনবিলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সর্বত্র ক্রমশ নীচে নেমে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকারী উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক অতি সম্প্রতি উল্লেখিত খাল পুন:খননের কাজ শুরু হয়েছে এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী ও চাহিদার ভিত্তিতে।
এদিকে গত ১৯ মার্চ সরেজমিনে খালটির পুন: দেখতে গিয়ে প্রথমেই কিছু অনিয়ম নজরে পড়ে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানায়, তাড়াশ উপজেলার পশ্চিম সীমান্তবর্তী সগুনা ইউনিয়নের ভেটুয়া গ্রাম হতে ১১টি ভেকু মেশিনের সাহায্যে এই খাল খনন অতি সম্প্রতি শুরু হয়েছে এবং দিনরাত খনন চলছে। ইতোমধ্যে কুন্দইল গ্রামের বেশানীর উজানে চকপাড়ার পশ্চিমে খালের কিয়দংশ খনন করা হয়েছে। সেখানে খালের উভয় পাড়ে প্রায় পাঁচ হাত করে খালের ভেতরে মাটি ফেলে পাড় বাধাই পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ এভাবে খান খনন করা হলে আসল খালের ভেতরে ৮-১০ হাত খননকৃত মাটি ফেলে ভরাট করে পাড় তৈরীর কারণে খালটি এ পর্যায়ে একটি সরু নালায় পরিণত হবে। কুন্দইল গ্রামের জনৈক অধিবাসী বলেন, সরকারী জরিপ নকশা অনুযায়ী খালটি ১২০ ফুট প্রস্থ থাকার কথা। সে মোতাবেক খালের মূল তীর বা পাড় অটুটু রেখে খাল করলে এর ভেতরটা পূর্বের মত অনেক প্রস্থ রাখতে হবে যা এখন আদৌ মানা হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে কুন্দইল গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, গত কার্তিক- অগ্রহায়ণ মাসের পরেই এ খাল খনন আরম্ভ করা উচিৎ ছিল। কেননা, আর ক’দিন পর এপ্রিলে বৃষ্টি হলে চলনবিলে এ খালের খনন কাজ ব্যাহত হবে। তাছাড়া খালের তীর বা পাড় সংলগ্ন সংশ্লিষ্ট এলাকার জমি মালিকগণ বহু বছর ধরে খালের তীর বেদখল পূর্বক তাদের জমির অন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছে। তাই চলতি ইরি-বোরো মওসুমের পূর্বেই খাল খনন সম্পর্কে এলাকাবাসীর মাঝে অগ্রিম জানান দিলে তারা সতর্ক ও সহযোগী থাকত এবং খালের তীরে মাটি ফেলা সহজ হতো। বর্তমানে ফসলী জমি ভেংগে খালের পাড়ে মাটি ফেলতে দিতে অনেকেই আপত্তি তুলছে বলে জানা গেছে। একারণে লোকজনের আপত্তির মুখে খালের তলদেশের খননকৃত মাটি মূল তীরে বা পাড়ে না ফেলে তা খালের ভেতরেই ভরাট করে পাড় তৈরীর ফলে খালের তলদেশ আরো সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এমনটি হলে খাল পুন:খননের মূল লক্ষ্য অর্জিত হবে না বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। এছাড়া বৃষ্টি-বর্ষা মওসুম আসন্ন হওয়ায় দীর্ঘ এ খাল খনন পুরোটা সফলভাবে করা সম্ভব হবে না বলেও এলাকাবাসী মনে করে। ওদিকে এই খাল পুন:খনন একটি বৃহৎ কর্মযজ্ঞ হলেও নিয়মানুযায়ী প্রকল্পের প্রবেশমুখে কোন তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ড দেখা যায় নি। এ ব্যাপারে এলাকার সাংসদগনের নজর দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন চলনবিলবাসী।