- আলহাজ্ব মোঃ রেজাউর রহমান (টুটু) :
ভুমি ও বাক স্বাধীনতা অধিকার প্রিয় জাতির জন্য আলোকবর্তিকা স্বরূপ। যে জাতি শুধু আধুনিক শিক্ষা নির্ভর সেই আধো মেধা আমাদের দরকার নেই। এ জাতির ভাগ্য উন্নয়নের জন্য লহ্মীর চেয়ে কায়িক শ্রম ও মেধা মননের বহিঃপ্রকাশ, আদর্শ ও উদ্দেশ্যের নির্ভরতা ঐকান্তিক প্রচেষ্টা দেশ ও জাতির উন্নতির সোপান। দেশ ও চাহিদা উপযোগী শিক্ষার পাশাপাশি এ ধরণের যোগ্য মেধাকে আদর্শিক রুপ দেওয়াই আমাদের কাংখিত লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। আত্মিক স্বত্ত্বাকে সর্বাধিক নিপূণতায়, ভালবাসায়, আদরে, স্নেহে সাহসিকতায় ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সার্বজনিন করার গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিকে আমরা শ্র্রদ্ধা করি। যিনি শ্রদ্ধার পাত্র তার আচার আদর্শ ও স্বাভাবিকতাকে আদর্শ হিসেবে আমরা দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতেই পারি।
জীবন যৌবনের সকল বাধা পেরিয়ে আমাদের দেশকে ডিজিটাল রূপদানের জন্য শুধু আক্ষরিক অর্থে সরকারী আদেশ নির্দেশ যথেষ্ট নয়। সেখানে দরকার সামাজিক যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে পেশাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে আমাদের স্বাধীকার দাবী আদায় করাসহ ভুমির সকল জটিল অংক সমাধান করে জাতীর অঙ্গীকার পূরণ করা আমাদের অধিকতর কর্তব্য। চলমান রুপ রসের সহযোগীতায় আমাদের উর্ধ্বতন অধস্তন স্যারদের উচিৎ ভালবাসার দীক্ষায় আমাদেরকে যোগ্যতার অধিকারিক প্রাতিষ্ঠানিক প্রেরণা দান, মনোনয়ন, আন্তযোগাযোগ ও সেতু বন্ধনের জন্য খোলা মেলা উন্নয়ন নির্ভর সিদ্ধান্ত বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া। তবেই পাহাড় সম বাধা দূর করে এজাতীর ভাগ্য উন্নয়ন ও সামাজিক, জাতীয় অধিকার পালন ও দাবীর প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তি ইমেজ গঠন করা সম্ভব।
ভুমি ব্যবস্থাপনা এতই জটিল যে, কঠিন অথচ গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধার পাশাপাশি সমালোচনা থাকে। এমতাবস্থায় অধিকার আদায়ে আলোর ঝলকানিতে চোখ না বুজে এগিয়ে চলাই উত্তম। সম্মিলিত উদ্দাম প্রচেষ্টা লক্ষ্য ও কাঙ্খিত ফল লাভের জন্য যথেষ্ট। শুধু প্রয়োজন আত্ম বিশ্বাস ও একাগ্রচিত্ত সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আমরা যারা ভুমি প্রশাসনের সর্বনিম্ন মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বে নিয়োজিত আছি তাদের দায়িত্ব কর্তব্য অনেক। অথচ দায়িত্ববোধের পাশাপাশি জনতার একুল ওকুল স্বার্থের আঘাতে আমাদের লক্ষ্য ভ্রষ্টই হয় না, সমাধান উত্তর অন্তরায় তৈরি করে। মা মাটি আর মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত ভুমি ব্যবস্থার সবচেয়ে নিম্নতর পর্যায়ের তথা রুট লেবেলের ইউনিয়ন ভুমি সহকারী ও উপসহকারী কর্মকর্তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে গঞ্জে রাত বিরাতে সাহসিকতার সাথে কাজ করতে হয়। আমাদের দায়িত্ব সমূহ নিম্নরূপ ঃ
১। রেকর্ড সংরক্ষণ। ২। ভুমি উন্নয়ন করের দাবী নির্ধারণ ও আদায় ৩। দৈনিক আদায় বহি, ক্যাশ বহি, পাশ বহি, ব্যাংকে চালানযোগে জমাসহ অন্যান্য রেজিস্ট্রার আপ টু ডেট করা ৪। ভুমি উন্নয়ন কর অনাদায়ে জমির পূর্ণ বিবরণী উপস্থাপন পূর্বক সার্টিফিকেট দায়ের, নিলাম ডিক্রী ও রেকর্ড হাল করণের অনুবতি কার্যক্রম বাস্তবায়ন ৫। সরকারি খাস জমি তথা হাট, ঘাট, জলা, পুকুর, খাল সংরক্ষণ উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা ।এমনকি সরকারি ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের জমি, ভুমি, রেকর্ড সংরক্ষণ তদ বিষয়ে চাহিত রিপোর্ট প্রদান, ভুমির উপরস্থ গাছ পালা সংরক্ষণ ও ভূমিকা পালন। ৬। সরকারি খাস জমি তদারকি ব্যবস্থাপনা ভুমিহীনদের মধ্যে বন্টন/আনুসঙ্গিক প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করা। ৭। সরকারি খাস পুকুর,ভিপি পুকুর সংরক্ষণ, তদারকি ও লীজ মানি আনায়ন করে রাজস্ব খাতে জমা ৮। পাবলিকের খরিদকৃত জমি সহ অন্যান্য সরকারি স্থাপনা জমি, হুকুম দখলকৃত জমির নামজারী প্রস্তাব/প্রতিবেদন/সরেজমিনে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান। ৯। আদিবাসীদের জমি সংরক্ষণ ও বিক্রীর উপযোগী তথ্য নির্ভর রিপোর্ট প্রদান ১০। সরকারি, আধা সরকারি অথবা পাবলিকের জমি, নিম্ন ও উচ্চ আদালত, এডিসি রেভিনিউ আদালত, জজ কোর্ট, হাই কোর্ট, কমিশনার অফিস, ভুমি সংস্কার বোর্ড, সুপ্রীম কোর্ট সহ তদারকি নির্ভর দালিলিক যুক্তি ও প্রমাণ সহ বিবরণী উপস্থাপন, সাক্ষ্য প্রদান ও নথি সংরক্ষণ। এক কথায় দেওয়ানী মামলায় সরকারী স্বার্থ সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ১১। নামজারী অনুমোদন উত্তর ভুমি উন্নয়ন কর আদায়, রেকর্ড রেজিস্ট্রার-ও, রেজিস্ট্রার-ওও সংশোধন ১২। সাব রেজিস্ট্রি অফিস হতে রেজিস্ট্রার-ওঢ-ও এর এলটি রিপোর্ট প্রদান ১৩। সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং পাবলিক ইজমেন্ট জমি সংরক্ষণ, হেফাজতকরণ ১৪। পাবলিকের জমি বা সরকারি জমি শ্রেণী পরিবর্তন/পুকুর কাটা/জলাশয় ভরাট/রাস্তা কাটা/গাছ কাটা বিষয়ে ভুমি ব্যবস্থাপনার আলোকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সরকারি অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরুপে পালন। ১৫। বন ভুমি জলাশয় সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা পালন ১৬। ভুমি উন্নয়ন আদায়ে উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ে ঢোল সহরত, মাইকিং, হ্যান্ডবিল, লাল নোটিশ প্রদান। ১৭। দাবীদারহীন জমি সংরক্ষণ, পিও ৯৮ জমি, শিলিং বহির্ভূত জমি, সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট জমি রেকর্ড ও বিনিময়কৃত জমির হালনাগাদ করণ। ১৮। ভুমিহীন চিহ্নিত করণ, ২৫ বিঘার নিম্নে প্রজা, উর্ধ্বের প্রজা, পিও ৯৮ প্রজা লেছী প্রজা, খাস জমির প্রজা ,বাণিজ্যিক জমির প্রজা শ্রেণী নির্ধারণ ও সংরক্ষণ ১৯। সরকারি উন্নয়নমুলক কাজের তদারকি, পরিদর্শন বাস্তবায়ন ও সহযোগিতা প্রদান। ২০। উচ্চ আদালত, ভুমি মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সময়ে জারীকৃত সরকারি আদেশ,নির্দেশ পালন ও বিধি সংরক্ষণ এবং রিপোর্ট প্রদান ২১। সিটিজেন চার্টার মতে, ভুমি সেবা গ্রহিতার বিধিবদ্ধ কাজের নির্দেশনা ও বাস্তবায়ন ২২। ভুমি মালিকের মৃত্যুতে তার জমি চিহ্নিত করে সঠিক ওয়ারিশ কায়েমের মাধ্যমে জমির নামজারী করণে উদ্বুদ্ধ করণ। ২৩। সরকারি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে হাট-বাজার, খাস জমি, পুকুর লীজী আদায় এবং দৈনন্দিন খাস ডাকের মাধ্যমে আদায়ী টাকা রাজস্ব খাতে জমা ২৪। ভিপি অর্পিত, সমর্পিত, পরিত্যাক্ত, অজ্ঞাত মালিকানাধীন জমি চিহ্নিত করণ। ২৫। দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া/বিপর্যয় সরকারি নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত বাস্তায়নে সহযোগিতা করা ২৬। জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনে সহকারী প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসার সহ এ্যাকটিং রিজার্ভ স্টাফ হিসাবে গুরুদায়িত্ব পালন ও অর্পিত দায়িত্বে সহযোগিতা করা।
ইত্যাকার কাজ সহ জাতীয় রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ও কাংখিত ফল লাভে আমরা সচেষ্ট থাকি। শুধু প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস ও একাগ্র সম্মিলিত প্রচেষ্টা। ভুমি ব্যবস্থাপনার জটিল বিষয়াদি সমাধান উত্তর যুগোপযোগী ডিজিটাল করার জন্য জমি হস্তান্তর তথা রেজিস্ট্রেশন, ভুমি ব্যবস্থাপনা ও ভুমি রেকর্ড ও জরীপ অধিদপ্তর একই মন্ত্রণালয় বা একই ছাদের নীচে আনা আশু প্রয়োজন। নচেৎ ভুমি ব্যবস্থার জটিল মামলা উৎস রোধ তথা অংশ স্বত্ব হিস্যা অধিকার স্বত্ব নির্ধারণ সম্ভব নয় । জনস্বার্থ ও মূল্যবোধ অবক্ষয়ের সৃষ্টি হচ্ছে মূলতঃ সি,এস, রেকর্ড বা এস,এ, রেকর্ডের আনুষ্ঠানিকতার শেষ রিভিশনাল সার্ভেও সমাধান হচ্ছে না। একটি সাধারণ স্বত্ব মামলা দীর্ঘদিন বছরের পর বছর এ কোর্ট থেকে কোর্ট, হাইকোর্ট, সুপ্রীম কোর্ট শেষাবধি আপোষ রফায় মামলার যবলিকা পতন উভয়পক্ষকে নিঃশেষ করে গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি দেয়ার মত অবস্থা। এতদবিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
লেখক :ভূমি অফিসে কর্মরত ।