বৃহত্তর চলনবিলে মুক্তা আহরণে সমস্যা ও সম্ভাবনা

Spread the love

সনজু কাদের : বৃহত্তর চলনবিল এলাকায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ঝিনুক চাষের মাধ্যমে মুক্তা আহরণ করে বিদেশে রপ্তানী করে শত শত কোটি টাকা আয়ের উজ্জল সম্ভাবনা থাকলেও সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে যথাযথ উদ্যোগ, পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচী ও জনসচেতনতার অভাব এবং সুষ্ঠুভাবে বাজারজাতকরণের অভাবে ব্যাপক সম্ভাবনাময় ওই মুক্তা বিপুল পরিমাণে আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। উল্লাপাড়া,তাড়াশ,রায়গঞ্জ,চাটমোহর,সিংড়া,বড়াইগ্রাম,গুরুদাসপুর ও শাহজাদপুরসহ বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলের নদী-নালা বিল ও জলাশয়ে ঝিনুক থেকে মুক্তা, চন্দ্রিকা,মতিপাল,চুমকি ও শ্বেতী আহরণ করা হয়ে থাকে। বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবা-পুকুর ও বিস্তৃত জলসীমায় প্রাকৃতিক নিয়মে ঝিনুক জন্মে থাকে। এসব ঝিনুকের মধ্যে সাদা,গোধুলী,ধুসরসহ বিভিন্ন আকার ও ধরণের মুক্তা ও মতিপাল জন্মে থাকে। এ অঞ্চল থেকে বছরে হাজার হাজার মন ঝিনুক আহরণ করা হয়। ঝিনুক আহরণকারীদের সিংহভাগই অদক্ষ, আনাড়ি ও কচিকাঁচা বয়সের। তাদের সম্যক জ্ঞানের অভাব ও ঝিনুক থেকে মুক্তা আহরণের সঠিক পদ্ধতি না জানা থাকায় চলনবিলে জন্ম নেওয়া বিপুল পরিমাণ মুক্তা আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা পৌরসদরের মণিরামপুর বাজারস্থ জয়গুরু জুয়েলার্সেও সত্বাধিকারী তপন অধিকারী এ প্রতিনিধিকে জানান, দেশে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যেমে যে ধরনের মুক্তা উৎপাদন করা হচ্ছে তা স্বর্ণলংকার প্রস্তুতকারকদের কাছে আকার ও প্রকারভেদে ভরিপ্রতি ৫শ থেকে ২৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একেকটি ছোট আকৃতির কৃত্রিম মুক্তার দাম পড়ছে প্রায় ১০ টাকা ও অপেক্ষাকৃত একটু বড় আকৃতির মুক্তার দাম পড়ছে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। জনশ্রুতি রয়েছে, বৃহত্তর চলনবিলে জন্ম নেওয়া মুক্তা, চন্দ্রিকা, মতিপাল, চুমকি ও শ্বেতীর গুণগত মানের কথা বিদেশেও প্রচলিত রয়েছে। এ অঞ্চলের ঝিনুকের মাঝে জন্ম নেওয়া মুক্তার মান ও গুণ ভাল হওয়ায় বিদেশে রপ্তানীর উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। মুক্তা সোনার গহনাসহ অলংকারের শোভা বর্ধনের কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মুক্তা থেকে জীবন রক্ষাকারী ঔষুধ তৈরী করা হয়। গুটিবসন্ত, হৃদরোগ, হাড় ও দাঁতের রোগের প্রতিষেধক হিসেবে মুক্তা ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। নানা গুনে গুণান্বিত ঐ মুক্তা সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে দক্ষ ও জনশক্তির মাধ্যমে আহরণ করা হলে জাতীয় অর্থনীতিতে নিসন্দেহে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিজ্ঞ মহল মনে করেন। জানা গেছে, গবেষণা ও মুক্তা আহরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে বৃৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলের শতকরা প্রায় ৮০ শতাংশ মুক্তা সংগ্রহ করা সম্ভব যার মূল্য কোটি কোটি টাকা। দেশে মুক্তা বাজারজাতকরণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় সংগ্রহকারী হত দরিদ্র জেলে ও কচিকাঁচারা চলনবিল অঞ্চল থেকে আহরিত প্রায় ২০ শতাংশ মুক্তা বিভিন্ন স্বর্ণকারদের কাছে পানির দরে বিক্রি করছে। ফলে ঐসব শত শত হাজার হাজার চির অবহেলিত, পতিত, অঅপাংক্তেয় জেলে সম্প্রদায়ের ভাগ্যনোœয়ন না হলেও অজ্ঞতাজনিত কারণে তাদের চোখে ধুলো দিয়ে স্বল্প টাকায় স্বর্ণকার সম্প্রদায় চলনবিলে আহরিত মূল্যবান মুক্তা ক্রয় করে রাতারাতি আঙ্গুল ফলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে। এব্যাপারে স্থানী মুক্তা সংগ্রহকারীদের মাঝে ব্যপক সচেতনতা সৃষ্টি ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও পৃষ্ঠপোষকতা করা হলে মুক্তা আহরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাত করণের মাধ্যমে বছরে কোটি কোটি টাকার আয়ের উজ্জল সম্ভাবনাময় এক নব দিগন্তের সূচনা ঘটবে। ফলে ভাগ্য বিরম্বিত হত দরিদ্র জেলে সম্প্রদায়সহ মুক্তা আহরণকারীরা অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠবে।এটি নি:সন্দেহে জাতীয় অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD