ঘুষ, দুর্নীতি – জিন্দাবাদ

Spread the love

আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার

কয়েক বছর আগেও বিশ্বে সবচেয়ে দূর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছিল একনম্বর স্থানে। যদিও বর্তমানে নম্বরটি পরিবর্তন হয়েছে তবে তা আমাদের নিজের গুণে নয় তার জন্য যে সব দেশ শীর্ষস্থানগুলো দখল করেছে ঐ সব দেশের সরকার বা জনগন কৃৃতিত্বের দাবী করতে পারে। আমরা সাধু হয়েছি বিষয়টা কিন্ত তেমন না। যারা দূর্নীতির সূচক নিয়ে মাথা ঘামান তারা জরিপ চালিয়ে দেখেছেন এদেশের মানুষজন বা সরকারী সিস্টেমে তেমন কিছুই পরিবর্তন হয় নি। কোনো কোনো হিসাবে দূর্নীতিবাজগন আরো বেপরোয়া হয়েছে। সরকারী কর্মচারীরা যাতে দূর্নীতিবাজ না হন, বেতন ভাতার টাকা দিয়েই তাদের সংসার যেন ভালভাবে চলে সেজন্য সরকার তাদের বেতন ভাতা দ্বিগুন করেছেন। কিন্ত কথায় বলে- কুকুরের লেজ নাকি ঘি মাখিয়ে টানলেও সোজা হয় না। যে চাকুরী নিতে বসদের বেতন বাড়ার আগে দিতে হত যা উপরী এখন তা তিনগুন বেড়ে গেছে কোথাও। দূদক নামক দূর্নীতি দমনের জন্য একটা প্রতিষ্ঠান আছে অবশ্য । তবে তা নখদন্তবিহীন কাগুজে বাঘ বলে ওয়াকেফহাল মহল মনে করেন। মাঝে মধ্যে হালুম হুলুম বলে হাঁক ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুএকটা শিকার ওরা ধরলেও দেখা যায় সেগুলো পর্বতের মূষিক প্রসবের মত বা চুনোপুঁটি মাত্র। রাঘব বোয়াল যারা তারা রয়ে যায় তা নাগালের বা ধরাছোয়ার বাইরে। তবুও এরই ধারাবাহিকতায় যা কিছুই করছিল দূর্নীতিবাজ কর্মচারীগনের বা লোকজনের তাতে একটু সমস্যা হয়। ওরা গিয়ে কেঁদে পড়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে। ফলে কয়েকদিন আগে নুতন আইন হলো- সরকারী কর্মচারীগনকে আটক করা যাবে না তাদের কর্মস্থল থেকে উপর মহলের অনুমতি ছাড়া যতই তারা দূর্নীতি করুক। এ প্রসঙ্গে একটা নাটকের কাহিনী স্মরণ করা যেতে পারে। তাতে দেখা যায়, একজন লোক পুকুরে গোসলে নেমে হঠাৎ বেশী পানিতে গিয়ে ডুবে যাবার দশায় পড়ে। তার চীৎকারে মানুষজন জড় হয়। পথচারীরা দেখে ফায়ার ব্রিগেডে জানায়। উদ্ধারকারী দল আসে। কিন্ত উপরের নির্দেশ ছাড়া ওরা অপারেশনে যেতে পারে না। শুরু হয় ফাইল চালাচালি। অনুমতি যখন মেলে ততক্ষণে ডুবে মারা যায় লোকটি। ধরা যাক, উপজেলা প্রকৌশলী ফাইল আটকে রেখে ঠিকাদারের নিকট ঘুষ দাবী করলো। ঠিকাদার দূদকে নালিস করলো। দূদক এখন যাবে নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট থেকে অনুমতি আনতে যাতে আটক করা যায় হাতে নাতে তারই কামাইয়ের পূতকে। কারণ, এটা ওপেন সিক্রেট যে নিম্ন পদের অফিসার বা কর্মচারীগন অবৈধভাবে উপরী রোজগার করলে তার বখরা উপরের স্তরে পদমর্যাদা অনুযায়ী পৌঁছে দেয়। সারা বছর চেষ্টা করে এমন অনুমতি পাবে কি দূদক ? হবে কি আদৌ আটক ঐ প্রকৌশলী ? ছোট বেলায় এমন একটা ছড়া ছিল পাঠ্য বইতে। সেখানে ছড়াকার লিখলেন-
হবুচন্দ্র রাজা বলে গবুচন্দ্রে ডেকে
আইন জারী করে দাও রাজ্যতে আজ থেকে।
কাঁদতে কেহ পারবে নাকো যতই মরুক শোকে
হাসবে আমার যতেক প্রজা হাসবে যতেক লোকে।
যতই শোকের কারণ ঘটুক হাসতে হবে তবু
আইনটা খুব কড়া কিন্ত শোন মন্ত্রী গবু ..

ঘুষখোর বা দূর্নীতিবাজদের রক্ষার জন্য সরকারী আইনটা হবুচন্দ্র রাজার মত হলো কিনা তা বিবেচ্য বিষয় বটে। যত বড় দূর্নীতিবাজ হোক অনুমতি নিতে হবে আগে তাকে ধরতে হলে- এটা কোনো আইন হলো ? এটা ঘূষখোরদের আরো আস্কারা দেয়া হলো তা কি আইন প্রণেতাগন জানে না ? জানে অবশ্যই, আরসেজন্য তাদের রক্ষাকবচ এই আইন যা আমলাদের খুশী ও বাগে রাখার উদ্দ্যেশ্যে তারা তৈরী করল।। কারণ, ঘুষখোর বা দূর্নীতিবাজগন অনেক ক্ষেত্রেই এমপি – মন্ত্রীদের মান বাঁচায় বা সরকারের উপকার করে। ধরা যাক, মন্ত্রী আসবেন দলীয় কর্মসূচী নিয়ে এলাকায় জনসভা করতে। তার জন্য মাইকিং, পোস্টারিং, মঞ্চসজ্জা, গেট সাজানো, কর্মীদের সাথে যোগাযোগ তথা প্রস্ততি সভা, লোকজনকে সভাস্থলে আনা- নেয়া ইত্যাদি করতে বহু খরচ। কে দেবে এটা ? স্থানীয় দলের ঠিকাদার গং এসব বহন করে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে। টি আর -কাবিখা ইত্যাদি যারা লুটপাট করে, ওরাও খরচ বেয়ার করে অনেক সময়। ঘুষখোর অফিসারগন চাঁদা দেয় আয়োজক নেতাদের হাতে। মন্ত্রী এলেন, জাঁকজমক প্রোগ্রাম করলেন, পিঠ চাপড়ে বাহবা দিলেন আয়োজকদের, খুব খুশী হয়ে গদগদচিত্তে ফিরে গেলেন। এরপর ঐসব নেতা বা কর্মচারীগন যদি দূর্নীতি করে মন্ত্রী বা রাষ্ট্র কি রক্ষা করতে তাদের পক্ষে দাঁড়াবে না। অবশ্যই এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ এই রক্ষাকবচ আইন। মুখে যতই বলুক, দূর্নীতি দমন করতে সরকার কখনই চায় না আন্তরিকভাবে। বর্তমান সরকার জঙ্গী দমনে ১০০% ভাগ আন্তরিক তা জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্ত দূর্নীতি দমনে ৫০% ভাগেরও কম কিম্বা ১০% আন্তরিক বলা চলে কোন মতে। নইলে ডঃ ফখরুদ্দিনের আমলে যেভাবে রাঘব বোয়াল সব আটক হয় দূর্নীতির জন্য তেমন কি হয়েছে ২০০৮ এর নির্বাচনের পর ? আরো যারা আটক ছিল তারা মুক্তি পেয়েছে। এমন কি যারা দূর্নীতির কারণে ২০০৮ এর নির্বাচনে অংশ নিতে পারে নি তারা বর্তমানে মন্ত্রী- এমপি। পাকিস্তানে নেওয়াজ শরীফের মত মানুষ আটক হলো গদীনসিন দলের তথা সরকারের শীর্ষ নেতা হয়েও। পরে তার মেয়ে ডায়নাস্টির ধূয়া তুলে এগিয়ে আসতে চাইলেও দূর্নীতির জন্যে গেল ফেঁসে। শেষে আম- ছালা সব গেল। অথচ এদেশে দূর্নীতিবাজদের রক্ষার্থে করা হচ্ছে আইন। এসব দেখেই খুব সম্ভব আলেক্সান্ডার দি গ্রেট তার সেনাপতিকে বলেছিলেন- সত্যিই সেলুকাস, বিচিত্র এই দেশ ! তবে সরকারের আইন প্রণয়নের ধরন দেখে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই পংক্তির কথা মনে পড়ে। যাতে তিনি লিখেছেন-
তোরা যে যা বলিস ভাই
আমার সোনার হরিণ চাই..

আর পত্রপত্রিকায় মন্ত্রী এমপিদের কেলেংকারীর খবর দেখেও তাদের কিছু না বলে আরো নুতন আইন করে সরকার যাতে পত্রিকাওয়ালাগন কূকর্মের নায়কদের পিছনে না লাগে। এসব দূর্নীতিবাজগনের আস্কারামূলক আইন দেখে গলা ফাটিয়ে শ্লোগান দিতে ইচ্ছে করে ঃ- ঘুষ, দূর্নীতি – জিন্দাবাদ

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD